ভলিবল কোর্টের মাপ, খেলার নিয়ম এবং ভলিবলের ইতিহাস সম্পর্কে জানুন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের বাসিন্দা উইলিয়াম জি মর্গান ১৮৯৫ সালে ভলিবল খেলা আবিষ্কার করেন। তিনি মুলত ব্যবসায়ীদের জন্য এই খেলাটা আবিষ্কার করেছিলেন। বাস্কেটবলের মতো দেখতে ভিন্ন মাত্রার এই ভলিবল খেলাটা পরবর্তীতে অন্য সব খেলার মতো বিশ্ব দরবারে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভলিবল খেলা নিয়ে বর্তমানে পুরো বিশ্বের খেলা প্রিয় মানুষদের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখা যায়। তবে অনেকেই ভলিবল কোর্টের মাপ এবং এই খেলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে তেমন একটা জানেনা। আজকের আর্টিকেলে ভলিবল কোর্টের মাপ এবং খেলা সম্পর্কে বিষদ আলোচনা করবো। ধৈর্য্য সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভলিবল কোর্টের মাপ

ভলিবল খেলা সম্পর্কে কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু ভলিবল কোর্টের মাপ কেমন হবে? কোন পাশে কতটুকু জায়গা থাকবে? সে সব বিষয়ে আমরা অধিকাংশ লোকজনই জানিনা। সো এখন আমরা ভলিবল খেলার কোর্ট সম্পর্কে জানবো। চলুন তাহলে ভলিবল কোর্টের মাপ সম্পর্কে জেনে আসি…

ভলিবল লম্বা ১৮ মিটার (৫৯ ফুট) এবং চওড়া ৯ মিটার (২৯.৫ ফুট) কোর্টে খেলা হয়, যা একটি নেট দ্বারা দুটি ৯ মিটার অর্ধে বিভক্ত থাকে। নেটটি চওড়ায় ১ মিটার এবং এর শীর্ষ প্রান্ত কোর্টের কেন্দ্র ভূমি থেকে ২.৪৩ মিটার পুরুষদের জন্যে এবং ২.২৪ মিটার নারীদের জন্যেভলিবল বলের ওজন হবে ২৬০ থেকে ২৮০ গ্রামভলিবল খেলার কোর্টটা সুদর পরিষ্কার হতে হয়। কোর্টের ঠিক মাঝখানে একটা লাইন দাগ দিয়ে দুই পাশে দুটো পিলার দিতে হয়, সেই পিলারে নেট বাঁধতে হয়। এবং এই নেটের দুই পাশের দুই কোর্টে দু’দল খেলার জন্য নামতে হয়। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ভলিবল কোর্টের এটাই আন্তর্জাতিক মাপ। তবে শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্করা নিজেদের প্রয়োজন মতো মাপ দিয়ে খেলতে পারে।

ভলিবল খেলার কিছু অজানা ইতিহাস

১৮৯৫ সালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের অধিবাসী উইলিয়াম জি. মর্গান ভলিবল খেলাটি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন । তবে শুরুর দিকে এই খেলার কোনো লিখিত নিয়ম কানুন ছিলো না! পরবর্তীতে দুই বছর পর ১৮৯৭ সালে ভলিবল খেলার নিয়ম কানুনগুলো বই আকারে প্রকাশিত হয়।

প্রথম দিকে ভলিবল খেলাটা খুব একটা জনপ্রিয়তা না পাওয়ার কারনে কোনো ফেডারেশন গঠন করা হয় না! কিন্তু আস্তে আস্তে খেলা-প্রেমীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হওয়ার পরে ১৯৪৭ সালে ফ্রান্সে সর্বপ্রথম ভলিবল ফেডারেশন গঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এফআইভিবি ভলিবল খেলার আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এফআইভিবি সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের লৌজানে অবস্থিতচিনের উই জিঝং বর্তমানে এফআইভিবি এর সভাপতি

ভলিবল খেলাটা এত জনপ্রিয়তা পায় যে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক জাতীয় ভলিবল ফেডারেশন গঠন করা হয়! এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে ১৯৪৯ সালে সর্বপ্রথম বিশ্ব ভলিবল চ্যাম্পিয়নশীপ খেলার আয়োজন হয়ভলিবল খেলার জনক উইলিয়াম জি মর্গান এই খেলার নাম দিয়েছিলেন ‘মিনটোনেট’। এই কিন্তু পরবর্তীতে মিনটোনেট নামটা পরিবর্তন হয়ে ভলিবল নামকরণ হয়। শুরুতে ভলিবল খেলার জন্য ধরাবাধা কোনো নিয়ম ছিলো না। এমনকি একজন খেলোয়াড় একাধিকবার মার দিয়ে প্রতিপক্ষ দলের কোর্টে বল পাঠাতে পারতো! কিন্তু সে নিয়মও পরিবর্তন হয়ে গেছে।

ভলিবল কোর্টের মাপ
ভলিবল খেলার দৃশ্য

ভলিবল খেলা সম্পর্কে কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম

পৃথিবীতে যত ধরনের খেলা আছে, সব খেলার জন্যই কিছু নির্দ্দিষ্ট নিয়ম নীতি রয়েছে। ভলিবল খেলাও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। এই অধ্যায়ে ভলিবল খেলার কিছু নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে জেনে আসি…

  • দুইটা টীম হয়ে ভলিবল খেলতে হয়। একেক টীমে ৬ জন করে সর্বমোট ১২ জন খেলোয়াড় নিয়ে একটি ম্যাচ শুরু হয়। প্রতি সেটে সর্বোচ্চ ৬ জন খেলোয়াড় বদল করা যাবে।
  • খেলা শুরু করার সময় কোর্টের সামনের সারিতে ৩ জন খেলোয়াড় এবং পেছনের সারিতে ৩ জন খেলোয়াড় সর্বমোট ৬জন খেলোয়াড় কোর্টে দাঁড়াবে।
  • কোর্টে ঢোকার আগে অন্যসব খেলাধুলার মতো ভলিবল খেলায় ও টস করতে হবে। টসে বিজয়ীরা কোর্ট সিলেকশন বা আগে সার্ভিস করবে।
  • একজন আম্পায়ার, একজন পয়েন্ট হিসাবকারী এবং দুই পাশে দুজন লাইন আম্পায়ারিং এর মাধ্যমে ভলিবল খেলা পরিচালিত হয়।
  • খেলা শুরু জন্য সার্ভেয়ার এক সার্ভিস বা এক আঘাতেই বলটা বিপক্ষ দলের কোর্টে পাঠাতে হবে। সার্ভিসের সময়ে একের অধিক বল টাচের কোনো সুযোগ নেই।
  • যে দল সার্ভিস করবে, সেই দলটি যদি বলটির শেষটা নিজেদের পক্ষে রাখতে পারে অর্থাৎ নিজেদের কোর্টে বলকে মাটি ছুঁতে না দেয় বা নেট পার করে প্রতিপক্ষের কোর্টের বাইরে না ফেলে তবে ১টি পয়েন্ট লাভ করবে।

আন্তর্জাতিক নিয়ম

  • আর শেষটা যদি বিপক্ষ দলের পক্ষে যায় তাহলে শুধুমাত্র সার্ভিসের দিক পরিবর্তন হয়। তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক নতুন নিয়মে প্রতিপক্ষ দল ও ১টি পয়েন্ট পেয়ে যাবে।
  • প্রতিপক্ষ দলের কোর্টে বলটা পাঠানোর জন্য একজন খেলোয়াড় একবার এবং দলীয় ভাবে তিন টাচের মধ্যে বলটা বিপক্ষ দলের কোর্টে পাঠাতেই হবে।
  • একজন খেলোয়াড় পরপর দু’বার বল টাচ করতে পারবে না। ভলিবল মারার সময়ে নেটের সাথে খেলোয়াড়ের কোনো স্পর্শ লাগতে পারবে না।
  • শরীরের যে কোনো অংশ দিয়ে বল টাচ করে বিপক্ষ দলের কোর্টে পাঠাতে পারবে। (আগের নিয়ম ছিলো শুধুমাত্র হাত দিয়ে বল টাচ করা যাবে)
  • সার্ভিসের বলটা নেট স্পর্শ করে বিপক্ষে দলের কোর্টে গেলে কোনো ক্ষতি নেই। নেট স্পর্শ করলেও সঠিক সার্ভিস ই ধরা হয়।
  • মাটিতে না লেগে মুল কোর্টের ভেতরের দাগুলো থেকে ভলিবল যদি বাইরে চলে যায় তবু্ও একজন খেলোয়াড় সেই বল ফিরিয়ে আনতে পারবে। তাতে ক্ষতি হবে না।
  • সার্ভিসের সময়ে বল কোর্টে দেওয়া দাগগুলো টাচ করলেও সেটা কোর্টের মধ্যে পড়েছে বলেই ধরা হয়।
  • যে দল আগে কমপক্ষে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে ২৫ পয়েন্ট অর্জন করবে, সে দল সেট বিজয়ী হবে। যদি উভয় দলের পয়েন্ট ২৪-২৪ হয় তবে সেক্ষেত্রে ডিউস হবে এবং ২ পয়েন্টের ব্যবধান না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলতে থাকবে।
  • ভলিবল প্রতিযোগিতায় ৫টি সেটের মধ্যে যে দল ৩টি সেটে জয়লাভ করবে সে দলই বিজয়ী হবে।

আরো পড়ুন: জো রুট টেস্ট পরিসংখ্যান

সর্বশেষ

শরীর সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়াম এবং খেলাধুলার বিকল্প কিছু নেই। শরীর চর্চা না করলে অল্প বয়সেই শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাঁধে। আর সুস্থতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা অসুস্থ হলেই আমরা বুঝতে পারি। অন্যদিকে খেলাধুলা করলে মন ও সতেজ হয়। নিয়মিত খেলা ধুলা করলে পড়াশোনা এবং কাজেও মন বসে। সুতরাং শরীর সুস্থ রাখা এবং মনকে সতেজ করার জন্য খেলা ধুলা করা অতিব জরুরি। এই অধ্যায়ে আমরা জনপ্রিয় একটি খেলা ‘ভলিবল’ খেলা সম্পর্কে জানতে পারলাম।

ভলিবল কোন দেশের জাতীয় খেলা?

শ্রীলঙ্কার জাতীয় খেলা ভলিবল। কুমার সাঙ্গাকারা, মহেলা জয়বর্ধন এবং অর্জুন রানাতুঙ্গার মতো ক্রিকেট খেলোয়াড় দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কার জাতীয় খেলার কথা আসলে অনেকের মাথায় সবচেয়ে আগে ক্রিকেট নামটা আসবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার জাতীয় খেলা ক্রিকেট নয়, শ্রীলঙ্কার জাতীয় খেলা ভলিবল

এই আর্টিকেলে ভলিবল কোর্টের মাপ এবং খেলা সম্পর্কে বিষদ আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা সঠিক তথ্য পেয়েছেন। এই আলোচনার বাহিরে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের কে তা জানাতে পারেন।

আমাদের সাথে থাকুন- Sports Buzz BD

1 thought on “ভলিবল কোর্টের মাপ, খেলার নিয়ম এবং ভলিবলের ইতিহাস সম্পর্কে জানুন”

Leave a Comment